‘ভালো এবং খারাপের মধ্যে সংঘর্ষ’—এই কথাটি অনেক বিশেষজ্ঞ যুদ্ধ বা দ্বন্দ্ব বলে সংজ্ঞায়িত করতে চেয়েছেন। কেউ মনে করেন, ক্ষমতা দখলের জন্য যে সংঘর্ষ এবং পারস্পরিক ক্ষতি সাধন তাই যুদ্ধ। যে দৃষ্টিকোণ থেকেই চিন্তা করা যাক না কেন, নভেল করোনাভাইরাস ও মানবসভ্যতার মধ্যে যে সংঘর্ষ তাতে অনুমান করা যাচ্ছে যে প্রকৃতির রাজ্যে মানুষের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ক্ষমতা দখলের যোগ্য প্রতিপক্ষ পাওয়া গেছে এবং ভবিষ্যতে এমন প্রতিপক্ষ আরো আসবে। মানুষের সুপিরিয়রিটি এখন আর দাবি করার বিষয় নয়, বরং প্রমাণ করার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। দুই মাস আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিলেন, ‘আমরা এই করোনাভাইরাসকে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত এবং পৃথিবীর সেরা মানুষ ও ডাক্তার আমাদের রয়েছে।’ এই কথাটি ছিল একটি দাবি। সেখানে ছিল আত্ম অহমিকা, ছিল বহু বছরের আমেরিকার সাফল্য ও গৌরবের মোটিভেটেড রিজনিং বা প্রতিষ্ঠিত বিশ্বাসের স্পষ্ট ছাপ। ঠিক তার দেড় মাস পর যখন তাদের সেই শ্রেষ্ঠত্বের দাবি লাশের মিছিলে পদপিষ্ট হয়ে গেছে তখন জনাব ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যেও সেই আত্মবিশ্বাস তেমনটি আর দেখতে পাওয়া যায় না। এখন তাড়াহুড়ো, অপ্রস্তুত ভাব এবং আক্রমণাত্মক ঘরানার বক্তব্য পেশ করা থেকে নিজেকে কোনোভাবেই সামলে রাখতে পারছেন না তিনি। এক বক্তব্যে তো ইন্ডিয়াকে দেখে নেওয়ার হুমকিও উঠে এসেছে। শুধু আমেরিকার ট্রাম্প নন, ইউরোপ, এশিয়ার প্রায় সব দেশেই রাষ্ট্রপ্রধানরা ভেবেছিলেনন এটি মোকাবেলা করাটা কঠিন হলেও ‘কতই বা কঠিন হবে?’ এই সন্দেহের পেছনে মূল কারণ ছিল, বহু বছরের প্রতিষ্ঠিত শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তিহীন বিশ্বাস। শ্রেষ্ঠত্ব বা সুপিরিয়রিটির যে হাঙ্গামা দেশে-দেশে চলছিল, দলে দলে ও ধর্মে ধর্মে চলছিল তা থেকে বেরিয়ে ভিন্নভাবে ভাবতে হবে তা কেউ আশা করেননি। যাঁরা মনে করছিলেন ডারউইনের শ্রেষ্ঠত্ব ও টিকে থাকার সংগ্রামের তত্ত্বে মানুষই জিতে গেল তাদের চিন্তার ওপর এটি একটি বড় আঘাত। গত শতকের বিজ্ঞানের উন্নয়ন ও মানুষের সুখ সম্পর্কে এক স্বর্গীয় উপসংহার টানতে গিয়েও বর্তমান সময়ের বিখ্যাত লেখক ও চিন্তক ইয়োভেল হারারি তাঁর ‘সেপিয়েন্স’ গ্রন্থের শেষে এসে নিজেকে টেনে ধরেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, সুখ বলতে শুধু মানুষের সুখ ভাবলে হবে না, সুখ বলতে শুধু একটি দেশের সুখ ভাবলে হবে না, একটি সম্প্রদায়েরও না, বরং সবার সুখ ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে। বুঝতে হবে যুদ্ধটা কার বিরুদ্ধে।’ হঠাত্ করেই পৃথিবীর কয়েক দশক ধরে মোটামুটি ভারসাম্যপূর্ণ শত্রু-মিত্রের সংজ্ঞাটা বদলে গেল এবং তা আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ দুটি পরিমণ্ডলেই।
পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও বেশ ভালোই চলছিল; উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির স্রোতে এক চমৎকার ভোগবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত ছিল সেই প্রবাহের মধ্যে। এই ভোগবাদী সমাজের ডিএনএ দেখতে গেলে খুব সূক্ষ্ম দৃষ্টি প্রয়োজন তা নয়, তবে নিজেকে সেখান থেকে পৃথক করে ফোকাস করা খুব জরুরি এবং ক্ষেত্রবিশেষে খানিকটা দুরূহ। একটা বিষয় এখানে বেশ স্পষ্ট, সেটি হলো এই ভোগবাদিতার সামনে-পেছনে এবং ওপরে-নিচে একটি নির্দিষ্ট দর্শন রয়েছে। সেটি হলো ক্ষমতা। সরকারকে যাঁরা মানছেন না, তাঁরা মনে করছেন এটি তাঁদের ক্ষমতা। যাঁরা আইন মানছেন না তাঁরা মনে করছেন এটি তাঁদের ক্ষমতা। সরকার যে কর্তৃত্ব জনগণের ওপর ব্যবহার করছে, সেটিও তারা ক্ষমতা মনে করছে। ঠিক আছে, এটিই স্বাভাবিক, এটিই চলে আসছে। এখন আমরা কয়েকটি স্টেটমেন্টকে ঢেলে সাজাই। জনাব ডোনাল্ড ট্রাম্প অথবা বাংলাদেশের বা ভারতের কোনো এক রাজনীতিবিদ বললেন, ‘এই ভাইরাসকে মোকাবেলা করার ক্ষমতা আমাদের আছে’—এই কথাটিকেই যদি ঘুরিয়ে বলা যায় যে ‘এই ভাইরাসকে মোকাবেলা করার দায়িত্ব আমাদের আছে’, তাহলে কেমন হয়? এই উত্তরাধুনিক যুগে নাগরিক সমাজ বিভ্রান্তিকর বক্তব্য শুনতে চায় না বরং জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সরকারের দায়িত্বশীল চেহারা দেখতে চায়। মহামারি থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন চিন্তাবিদ বিভিন্ন মতবাদ দেবেন, আর্গুমেন্ট দেবেন। কে কিভাবে নেবে তাতে বৈচিত্র্য দেখা দেবে স্বাভাবিক। কিন্তু টিকে থাকার এই যুদ্ধে প্রতিপক্ষ এমন এক শক্তি, যার বিরুদ্ধে প্রচলিত ক্ষমতার ধারণা কার্যকর হবে না। এখানে ক্ষমতাশালী হতে গেলে দায়িত্বশীল হতে হবে। দুটিই অনুভূতি, একটি নরম্যাটিভ বা সক্ষমতা সম্পর্কিত এবং অন্যটি রেসপনসিভ বা প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত। এই দুটির মধ্যে সম্পর্ক হলো, দায়িত্ব পালন করতে গেলে ক্ষমতা লাগে। যদি কোনো কর্তৃপক্ষ মনে করে যে তার ক্ষমতা রয়েছে, এর অর্থ হলো তাকে দায়িত্ব পালনের জন্য সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। লেখাটির শুরুর লাইনে উল্লেখ করেছি যে ‘ভালো এবং খারাপের মধ্যে সংঘর্ষই যুদ্ধ’, এটি বলার কারণ হলো, এখানে ভালো বলতে বুঝছি যারা আমরা বাঁচতে চাই, আর খারাপ হলো যারা আমাদের মারতে চায়। তাহলে কি আমরা ধরেই নিচ্ছি শুধু ভাইরাসই আমাদের মারতে চাচ্ছে? ভালো মন্দের যুদ্ধে ভাইরাস হলো ভিলেন, আর আমরা সবাই মহাকবি ভার্জিলের সমুদ্র বিজয়ী মহাবীর ইরিস? যাঁরা সরকারের নির্ধারিত নিয়ম মানছেন না, যাঁরা সামাজিক দূরত্ব মানছেন না, যাঁরা চাল চুরি করছেন, খাদ্য দ্রব্যাদির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন, মাল গুদামজাত করছেন এবং যাঁরা এখনো ক্ষমতা ও দায়িত্বের পার্থক্য বুঝছেন না তাদেরও কি আমরা সহযোদ্ধা ভাবছি? আসলে এই যুদ্ধে ভাইরাস হলো হানাদার বাহিনী আর যারা এমন ক্রান্তিকালে মানুষকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে তারাও তাদের সহযোগী, কলাবরেটর। এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলে প্রথমে চিনতে হবে আমাদের সহযোদ্ধা কারা এবং তাদের দায়িত্ব অনুসারে সক্ষমতা আছে কি না; একই সঙ্গে জানতে হবে আমাদের শত্রু ও তাদের সহযোগীদেরও।
বিখ্যাত এনসিয়েন্ট রাইটার সান ঝু তাঁর ‘আর্ট অব ওয়ার’ গ্রন্থে যুদ্ধে জয়ের একটি সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ‘যুদ্ধ ক্ষেত্রে আগে পৌঁছানো’র ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। যুদ্ধ ক্ষেত্রে যারা আগে পৌঁছায় তারা অপেক্ষাকৃত ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে। আর যারা দেরি করে পৌঁছায় তারা তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে সব এলোমেলো করে ফেলে। সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ কোরিয়া যুদ্ধ ক্ষেত্রে আগেই পৌঁছে বেশ ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিল, প্রস্তুত করেছিল তাদের যোদ্ধাদের এবং তুলে দিয়েছিল পর্যাপ্ত হাতিয়ার, প্রশিক্ষণ ও দীক্ষা। দুর্বল রাষ্ট্রের সব সময় কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে, এটা থাকবেই। কিন্তু সমস্যা হলো যখন তারা এই সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানে না। অতি আত্মবিশ্বাসী মানুষ নিজের অজ্ঞতা সম্পর্কে অনেক সময়ই ওয়াকিবহাল থাকেন না। এ ক্ষেত্রে আমরা অগ্রসর দেশগুলো থেকে সাহায্য নিতে পারি, তারাও আমাদের সহযোদ্ধা। এ ছাড়া আমাদের নিজস্ব সৈনিক, তাদের দায়িত্ব ও সক্ষমতাগুলো পর্যালোচনা করতে হবে। ডাক্তার, প্রশাসন, পুলিশ, আনসার, ব্যাংকার, বিদ্যুত্ বিভাগ, সেনা বাহিনী, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের সবাই যারা কি না কোলাবরেটর গ্রুপের নয় তারা এ যুদ্ধের সৈনিক। কিন্তু যোদ্ধারা কখন জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে এবং কখন সে যুদ্ধ ক্ষেত্রে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে তার খবরও ক্যাপ্টেনকে বা কমান্ডারকে রাখতে হয়। সরকার যদি এই যুদ্ধের কমান্ডার হয় তবে এ দায়িত্ব তারই। যোদ্ধা যখন বুঝতে পারে তার কম্পানি বা তার কন্টিনজেন্ট যোদ্ধার নিরাপত্তা ও আক্রমণের অস্ত্র সরবরাহ নিশ্চিত করবে, যখন কমান্ডার তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের দায়িত্ব নেবে তখন সেই যোদ্ধা বীর বিক্রমে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে যায়। আর যোদ্ধার মনোবল ভেঙে যায় সহযোদ্ধার মৃত্যুতে, বিশৃঙ্খল রণকৌশলে। এ কারণে কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব, কি হবে রণ কৌশল, কি হবে আক্রমণ অস্ত্র, কি হবে আত্মরক্ষার বর্ম এবং কি হবে মৃত্যু পরবর্তি পরিবারের অবস্থা তা খুব পরিষ্কার না হলে যোদ্ধারা নিজেকে উজাড় করে দিয়ে যুদ্ধ করতে পারে না। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রেট কেমন হতে পারে, কোথায় রাখব, আইসোলেশন কিভাবে হবে, বাজার কিভাবে ঠিক রাখা যাবে, নানা বিষয়ে সমর কৌশল গহণ করার ব্যাপার ছিল। সরকার এরই মধ্যে সব ব্যবস্থা করার কাজই হাতে নিয়েছে। ঘোষণা করেছে বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ। এই প্যাকেজের আওতায় তাদের আক্রমণ, রক্ষা ও ঝুঁকির বিষয়ের অনেক সুবিধা প্রদানই সম্ভব হবে। কিন্তু যারা সরকারের ভেতরে বা বাইরে এগুলো বাস্তবায়নে বাঁধা সৃষ্টি করবেন তারা সহযোদ্ধা নয়, বরং প্রতিপক্ষ। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কোনো ধরনের বিশেষ প্রতিরক্ষা ছাড়াই হাটে-মাঠে ছুটে চলেছেন। বিপদের ঝুঁকি জেনেও ডাক্তার ভাইয়েরা আজ অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে বর্ম তুলে নিয়েছেন। ব্যাংকাররা নানা জীবাণু ভর্তি টাকা নাড়াচাড়া করছেন সারা দিন; পুলিশ সর্বত্র ছুটেছে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা ও অপরাধ দমন করার কাজে। বিদ্যুতের উৎপাদন ও সরবরাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা কর্মচারীরা যদি ভেঙে পড়ে তাহলে নিভে যাবে সব আলো, বন্ধ হয়ে যাবে হাসপাতাল, ঘর বাড়ির সব প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম। বিদ্যুতের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মীরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছে। কাদের ভালোর জন্য এগুলো করছে তারা? তাদের নিজের? এই যোদ্ধাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে, তাদের মনোবল বাঁচিয়ে রাখতে হবে। যারা কোয়ারেন্টিনে আছে তাদের নিয়ে আমরা অনেক কথা বলেছি, অনেক লিখেছি। কিন্তু এই দুর্যোগের সময় সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারী যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে তাতে তারা যদি আমাদের দ্বারা উত্সাহিত না হয়, সরকার কর্তৃক প্রণোদিত না হয় তাহলে যুদ্ধে আমরা সবাই হেরে যাব। বাংলাদেশের অর্থচক্রের যে কাঠামো তাতে ব্যাংক বন্ধ করে দিলে হয়তো সমাজে ভিন্ন এক দৈন দুর্যোগ নেমে আসতে পারে। এ কারণে অন্যান্য যোদ্ধার সঙ্গে এই অর্থযোদ্ধারাও লড়ে যাচ্ছেন সমান তালে। তাই আমরা সবাই সহযোদ্ধা, তাদের নিরাপত্তা ও উত্সাহ দেওয়ার জন্য প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্ট আলাদা করে তো বটেই, সরকার সমন্বিতভাবে এরই মধ্যে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয় বটে, তবে ক্ষেত্রবিশেষে অপর্যাপ্ত। এটি ধরে রাখার পাশাপাশি বৃদ্ধি করার প্রস্তুতি থাকা উচিত।
পুরো কর্মপরিবেশটি যেহেতু এই যুদ্ধের সাপ্লাই চেইন তাই আমরা সবাই এখানে সহকর্মী। ঊর্ধ্বতন বা অধস্তন কর্মচারীর আচরণে একে অন্যকে প্রভাবিত করে, উদ্দীপিত করে বা দুর্বল করে দেয়। সহকর্মীর সঙ্গে কাজ করা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো—‘স্টুপিড কলিগ টেস্ট’। অর্থাত্ আপনি ভালো কর্মকর্তা হলেও আপনার পাশের অবিবেচক সহকর্মীর কারণে আপনি প্রতিনিয়ত বিপদে পড়বেন এবং মানসিক চাপে থাকবেন। আমরা আমাদের সহকর্মীদের জন্য ‘স্টুপিড কলিগ’ হব না। শোনা যাচ্ছে যে কিছু কিছু বাড়িওয়ালা ডাক্তার ও স্বার্স্থ্যকর্মীদের বাড়ি ছেড়ে দিতে বলছেন। এমনটি বলা যে অমূলক তা নয়, তবে অনৈতিক। বাড়িওয়ালারা ভাড়াটিয়া ও নিজেদের নিয়ে শঙ্কিত। আপনারা সবাই মিলে একটু কথা বলে দেখতে পারেন যে সেই ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য আলাদা এক্সেস বা এক্সিটের ব্যবস্থা করা যায় কি না বা কয়দিন পর পর বাসার সিঁড়িতে, লিফটে সবার অর্থায়নে হাইজিন ওয়াশ বা স্যানিটাইজার স্প্রে করা যায় কি না। যিনি ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মী তিনিও এ বিষয়ে হতাশ হবেন না; সময়টাই এমন যে অনেকেই দূরত্ব বজায় রাখা আর দূরে ঠেলে দেওয়ার অর্থই বুঝছে না। আপনিও যতটা পারা যায় সাবধানে থাকবেন, তাদের আপনার সাবধানতা সম্পর্কে জানাবেন যেন তারা আপনার প্রতি আস্থা রাখতে পারে। আমারা সহকর্মী ও সহযোদ্ধাদের সাহস দেব, উত্সাহ দেব, তাদের পাশে দাঁড়াব। সামাজিক দূরত্ব না মেনে, ব্যাংকে হুড়োহুড়ি করে, বিদ্যুতের অপচয় করে, ডাক্তারদের অসহযোগিতা করে নিজেদের কলাবরেটর হিসেবে প্রামাণ করব না। সরকারের ত্রাণ যেখানে যাওয়ার কথা সেখানে পৌঁছে দেব, বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করব না। যারা এই পথে বাধা সৃষ্টি করবে তাদের বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে আদেশ দিয়েছেন। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটরা যাঁরা মাঠে আছেন তাঁরা এই শত্রুপক্ষের মিত্রদের যথাযথ আইনের আওতায় নিয়ে আসুন এখনই। সমাজ থেকে তাদের এ মুহূর্তে বিচ্ছিন্ন (আইসোলেট) করা খুব প্রয়োজন। সবার ভালোর জন্য সহযোদ্ধাদের একসঙ্গে কাজ করে যাওয়াই হবে আমাদের দীক্ষা। সুখ এমন এক জিনিস যা শুধু একটি নির্দিষ্ট মানুষ, গোত্র বা দেশের জন্য আহরণ করতে নেই। সুখ ও সমৃদ্ধি সবার জন্য।
লেখক : পাবলিক পলিসি গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটার, যুক্তরাজ্য,
সহকারী সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
https://www.kalerkantho.com/online/miscellaneous/2020/04/28/904679